দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : করোনাময় পরিস্থিতিতে দু'দু'ফায় বাড়ি ফিরেও 'নিজভূমে পরবাসী' ওরা। 'ওরা' মানে সদ্য রাজস্থান ফেরৎ বাঁকুড়া-১ ব্লকের জগদ্দলা গ্রামের সদ্য রাজস্থান ফেরৎ ১৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামের একাংশের আপত্তিতে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে জায়গা হয়নি। কারোরই বাড়িতে আগামী ১৪ দিন 'আলাদা' থাকার মতো পরিকাঠামো নেই। ফলে গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে জঙ্গল লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় আলো, পানীয় জলের ব্যবস্থা ছাড়াই অস্থায়ী ছাঁওনীর নিচে দিন কাটছে তাদের। সেখানেও পদে পদে বিপদ। এই মুহূর্তে ঐ বিষধর চন্দ্রবোড়ার সাপের উৎপাত সঙ্গে জংলী পোকা ও কাঁকড়া বিছের সদর্প উপস্থিতি তো রয়েইছে। তবুও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সময় কাটছে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের এই ১৩ সদস্যের।
এই মুহূর্তে জঙ্গলধারে অস্থায়ী তাঁবুতে দিন কাটানো বাড়ি ফেরৎ পরিযায়ী শ্রমিক বিকাশ মাল বলেন, গ্রামের একাংশের আপত্তিতে স্কুল বাড়িতে আমাদের জায়গা হয়নি। বন্ধু বান্ধব আর পরিবারের লোকেদের তৈরী করে দেওয়া এই ছাওনীর নিচেই আমাদের দিন কাটছে। পোকা- মাকড়, মশার উৎপাত আর এক প্রকার সাপেদের সঙ্গেই এখন কাটাতে হচ্ছে। একই সঙ্গে পানীয় জল ও আলোর কোন ব্যবস্থা নেই বলে তারা জানান।
গ্রামবাসী গৌতম মাল বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রশাসনের কাছে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরীর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। একাংশের গ্রামবাসীদের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। যেখানে ওরা আছে সেখানে জল, আলোর কোন ব্যবস্থা নেই। এই ১৩ বাড়ি ফেরৎ পরিযায়ী শ্রমিককে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া কিম্বা নলকূপ থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছেনা তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে গ্রামবাসী অনিকেত গোস্বামী, অপর্ণা মণ্ডলরা বলেন, একেবারে জনবহুল এলাকার মধ্যে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের নলকূপ, সামনের রাস্তা গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষ ব্যবহার করেন। সামনের মাঠে শিশুরা খেলা করেন। মাত্র ক'জনের জন্য সিংহভাগ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হবে। সেকারণেই তারা বিরোধীতা করেছেন বলে জানান।
জগদল্লা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুশান্ত শীট বলেন, সরকারী কোন লিখিত নির্দেশ নেই। কিন্তু মানবিকতার খাতিরে গ্রামের স্কুলে রাখার কথা ভাবা হয়েছিল। একাংশের গ্রামবাসীদের বিরোধীতায় ঐ ১৩ জনকে সেখানে রাখা যায়নি। বাধ্য হয়েই জঙ্গল লাগোয়া মাঠেই রাখতে হয়েছে। সেরকম পরিস্থিতি তৈরী হলে নিজে বাইরে থেকে ঐ পরিযায়ী শ্রমিকদের তার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে বলে তিনি জানান।